সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:২০ অপরাহ্ন

কক্ষ নম্বর ২০১১ : বুয়েট শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক

কক্ষ নম্বর ২০১১ : বুয়েট শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক

স্বদেশ ডেস্ক:

আতঙ্কের নাম বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ। এই নম্বর শুনলে বুয়েটের যে কেউ আঁতকে উঠতেন। সন্ধ্যা হলেই যে কক্ষে বসত মদের আসর, আর নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড। হলের শিক্ষার্থীরাই নন, বাইরে থেকেও অনেককে ধরে নিয়ে এই কক্ষে আটকে নির্যাতন করা হতো। যার মূল হোতা ছিল অমিত সাহা। ২০১১ নম্বর কক্ষের সাথে ওই কক্ষের বাসিন্দারাও ছিল বুয়েটের আতঙ্ক। কক্ষটি এখন তালাবদ্ধ রয়েছে।

এই কক্ষেই গত ৬ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত নির্মম নির্যাতনে আবরার নিহত হলে দুর্র্বৃত্ত ছাত্রলীগ নেতারা তার লাশ হলের সিঁড়ির পাশে ফেলে রাখে। তার শরীরের কোনো অংশই অক্ষত ছিলো না।

২০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা উপসম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশাররফ ওরফে সকাল এবং প্রত্যয় মুবিন। এর মধ্যে প্রত্যয় ঘটনার রাতে হলে ছিলেন না বলে জানা গেছে। রাফিদ ও সকাল এই মামলার আসামি। কিন্তু মূল নায়ক অমিত সাহা হলেও মামলার এজাহার থেকে তার নাম বাদ পড়ে গেছে। অথচ অমিত নিজেই নিহত আবরারকে ওই কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় বলে ক্যাম্পাস সূত্র জানায়।

আবরারকে এই কক্ষে নিয়ে বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে তাকে মারধর করা হয়। এ মামলায় ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। যার এক নম্বর আসামি হলেনÑ বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (২৪)। অন্যান্য আসামিরা হলেনÑ মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩), অনিক সরকার (২২), মেহেদী হাসান রবিন (২২), ইফতি মোশারফ সকাল (২১), মনিরুজ্জামান মনির (২১), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২২), মাজেদুল ইসলাম (২১), মোজাহিদুল ওরফে মোজাহিদুর রহমান (২১), তানভীর আহম্মেদ (২১), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২০), জিসান (২১), আকাশ (২১), শামীম বিল্লাহ (২০), শাদাত (২০), এহতেশামুল রাব্বি তানিম (২০), মোর্শেদ (২০), মোয়াজ (২০) এবং মুনতাসির আল জেমি (২০)। অমিত সাহা ডেকে নিয়ে আবরারকে হত্যা করলেও তাকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি। ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, অমিত সাহার এই কক্ষে সন্ধ্যা হলেই আড্ডা বসত ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের। সাধারণ কোনো ছাত্র তাদের কথার বাইরে কোনো কাজ করলে রাতে ওই ছাত্রকে ডাকা হতো। নানাভাবে শায়েস্তা করা হতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের। সন্ধ্যা হলেই সেখানে বসতো মদ-ইয়াবাসহ নানা নেশার আড্ডা।

এই আড্ডারও কেন্দ্রবিন্দু থাকত ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী। হল সূত্র জানায়, হল প্রশাসন ছাত্রলীগের এই কর্মকাণ্ডের কথা জানতো। কিন্তু তারা প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা করেনি। উল্টো তাদের আশকারাই দিয়েছে হল প্রশাসন। নবাগত শিক্ষার্থীদের এই কক্ষে নিয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হতো। ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ২০০৫ নম্বর কক্ষটিও ছাত্রলীগের টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। এ কক্ষেও নানা অসামাজিক কার্যকলাপ হতো বলে অভিযোগ আছে। বাইরে থেকেও মানুষকে ধরে এনে এই দুই কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হতো। পুলিশ জানিয়েছে, ২০১১ নম্বর কক্ষটি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877